- Get link
- X
- Other Apps
- Get link
- X
- Other Apps
মার্কিনীদের সাম্রাজ্যবাদী হয়ে ওঠার ধাপ
আজকের মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কিভাবে পৃথিবীর একমাত্র পরাশক্তি রুপে আর্বিভূত হলো? কি সেই শক্তি যার মাধ্যমে তার বিশ্বের সুপার হয়ে ওঠা? তার সুপার পাওয়ার হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে হিংস্র, রক্তাত্ব ও নিষ্ঠুরতার এক মহা উপখ্যান। আজকের মানবাধিকারের ফেরীওয়ালা খ্যাত মার্কিনীদের আদি পেশা ছিলো দস্যুতা। তাদের প্রধান ব্যবসা ছিলো মাদক ও দাস বাণিজ্য।বিশ্বের দেশে দেশে দস্যুতা, নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসা আর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরীহ মানুষ অপহরণ করে দাস বানানো এগুলোই তাদের প্রধান কাজ। দস্যুতা, মাদক আর দাস বাণিজ্যের মাধ্যমে কিভাবে বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তির দেশে পরিণত হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবার তা সংক্ষেপে আলোচনা করব।
দস্যুতা দিয়ে শুরু
আজকের মানবতা ও মানবাধিকারেরে ফেরী করে বেড়ানো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আদি পেশা ছিলো দস্যুতা।মুসলিম বিজ্ঞানী আবু রাইহান আল বেরুনী আমেরিকা যাবার পথ চিহিৃত করার পর ব্যবসা ও ধর্ম প্রচারের লক্ষে দলে দলে ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরা আমেরিকা যাতায়াত শুরু করে দেয়। তাদের মূল কাজ ছিল দস্যুতা। আমেরিকার আদিবাসী যারা রেড ইন্ডিয়ান বলে চিহিৃত, তাদের সহায় সম্পত্তি শক্তিবলে দখল করাই ছিলো তাদের আদি প্রধান পেশা। আমেরিকার শ্বেতাঙ্গদের উল্লেখযোগ্য ব্যবসা ছিল দাস ও মাদক ব্যবসা। আর উভয় প্রকার ব্যবসাই ছিল রেড ইন্ডিয়ানদের স্বার্থবিরুধী। দাস ব্যবসার মাধ্যমে যেখানে তারা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করত এবং এই শক্তি দিয়ে রেড ইন্ডিয়ানদের উপর হামলা চালাত। তাদের জমাজমি দখল করে নির্দোষ দাসত্বের মাধ্যমে চাষাবাদ করাত।
আর মাদক ব্যবসার মাধ্যমে গোটা অধিবাসীদের মধ্যে মাদকাসক্তি ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। সেখানে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী শ্বেতাঙ্গরা রেড ইন্ডিয়ানদের সংখ্যালঘুতে পরিনত করার জন্য সংক্রামক ও মরণব্যাধী ছড়ায়, ব্যাপক মাদকাসক্তির বিস্তার ঘটায়। নির্বিচারে গণহত্যা চালায় ও পালের পর পাল বুনো মেষ হত্যা করে পরিকল্পিত খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে। আজকে ওবামা বুশের পূর্ব পুরুষরা যারা ধর্মীয় উন্মাদের হাত থেকে বাচাঁর জন্য ইউরোপ থেকে পালিয়ে আমেরিকা গিয়েছিল, তারা আনন্দ উল্লাসের জন্য রেড ইন্ডিয়ানদের ও তাদের খাদ্যের প্রধান উৎস বুনো মেষ হত্যা করত। এর ফলে আধিবাসীরা এক পর্যায়ে রোগ ব্যাধি, খাদ্যভাব ও গণহত্যার শিকার হয়ে সংখ্যালগু জনগোষ্ঠিতে পরিনত হয় এবং বহিরাগতদের নির্দেশে অনুর্বর ও অস্বাস্থ্যকর স্থানে অমানবিক পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হয়। বর্তমানে সভ্যতার ছোঁয়া থেকে তারা সম্পূর্ণ বঞ্চিত। দিন দিন তাদের সংখ্যা কেবল হ্রাসই পাচ্ছে। এ হল আমেরিকার আদি ইতিহাস!!
আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের গণহত্যা
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি মার্কিনীদের হাতে রেড ইন্ডিয়ানদের গণহত্যার কথা। কিন্তু পাশ্চাত্য মিডিয়া প্রচার করেছে তারা নাকি বিভিন্ন রোগে নির্মূল হয়ে গেছে। খুবই বিস্ময়ের কথা! এতো দিন তারা ঠিক ছিলো, কিন্তু শ্বেতাঙ্গরা আসার পরই নাকি মহামারীতে শুধু রেড ইন্ডিয়ানরা মারা গেল।মহামারীই নাকি শুধু রেড ইন্ডিয়ানকেই শেষ করেছে, শ্বেতাঙ্গদের বাদ দিয়ে। আসলে এ মহামারীর পেছরে নাটের গুরু ছিলো শ্বেতাঙ্গরাই, তাইতো সেই মহামারী তাদের কিছু করতে পারে নাই।কিভাবে তাদের গণহত্যা করে নির্মূল করা হয়েছিল আসুন একটু পরিসংখ্যান জেনে নিই।ইউরোপীয়রা যখন প্রথম আমেরিকায় পর্দাপন করে। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এক কোটি দশ লাখ আদিবাসী বাস করত।
ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের গণহত্যার কারণে বর্তমানে সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এদের সংখ্যা এসে দাড়িয়েছে দশ লাখেরও নীচে। কানাডায় মাত্র পাঁচ লাখের মত রেড ইন্ডিয়ান বেঁচে আছে যা সেখানকার মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ মাত্র। আর আমেরিকায়ও পাঁচ লাখের মতো বেঁচে ছিলো। তাহলে সেখানে কি পরিমান গণহত্যা চালানো হয়েছিল তা নিশ্চয় পাঠকরা বুঝতে পেরেছেন।এক কোটি দশ লাখ আদিবাসী খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে শুধু দশ লাখে পরিণত করা হলো।বাকি এক কোটি কোথায় গেল? কি আজব পদ্ধতি জনসংখ্যা কমানোর!কি পরিমান গণহত্যা চালানো হয়েছে রেড ইন্ডিয়ানদের ওপর?
অথচ এর বাস্তব প্রমান আজ আমরা বিশ্বব্যাপী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের শিকার জনপদে লক্ষ্য করতেছি।শুধু ইরাকেই গত দশ বছরে ২৭ লাখের অধিক মানুষকে গণহত্যা করা হয়েছে। আর এর প্রশিক্ষণ আমেরিকানরা সেই রেড ইন্ডিয়ানদের দিয়ে নিয়েছিল।(আল্লাহ এদের থেকে বিশ্ব মানবতাকে রক্ষা করুন) তবে তারা যে পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে তাতে এপিচি, মাইকান, সুবিকেট, বিউথাক, নারাংগানসেট, ওয়াম, পানাগ প্রভূতি উপজাতীয়দের মত নিশ্চিহৃ হতে বেশি সময় লাগবে না। শ্বেতাঙ্গদের নির্মূল অভিযানের শিকার হয়ে এসব উপজাতি সমূহ নিশ্চিহৃ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে সারা বিশ্বকে কবজা করার জন্য শ্বেতাঙ্গরা রেড ইন্ডিয়ানদের ওপর দস্যুতা ও গণহত্যা চালিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলো।
নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসা
বর্তমানে এটা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য যে, মাদকাসক্ততা হচ্ছে সকল অপরাধের মূল।কারণ ড্রাগ আসক্তদের ভেতরে মানবিক কোন অনুভূতি থাকে না। তাই তারা শুধু রেড ইন্ডিয়ানদের হাসিরচ্চলে গণহত্যা করে ক্ষান্ত হতো না তাদের প্রধান খাদ্য বুনো মেষ গুলোকেও নির্মমভাবে হত্যা করত। এগুলো নাকি তখন তাদের বিনোদনের কাজ ছিলো।তাদের সেই আদি নিষ্ঠুরতার প্রমাণ আজকে ইরাকে, আফগানিস্তানে, ভিয়েতনামে, ফিলিস্তিনেসহ পৃথিবীর দিকে দিকে আজ আমরা চাক্ষুস দেখতে পাচ্ছি মিডিয়ার বদৌলতে।তাদের এ নিষ্ঠুর বিনোদন প্রিয়তার আজ বাস্তব সাক্ষী আজকের আবু গারিব ও গুয়েন্তানামো বে কারাগার। এখন আসি তাদের মাদক ব্যবসা সম্পর্কে।
রেড ইন্ডিয়ানদের শেষ করার পর আমেরিকার কর্তৃত্ব যখন শ্বেতাঙ্গদের হাতে গিয়ে পড়ল। তখণ শ্বেতাঙ্গরা মার্কিন নাগরিক পরিচয়ে বাণিজ্যের নামে রণপ্রস্তুতি নিয়ে এশিয়ার উদ্দ্যেশে তরী ভাসায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক বছর পরই মার্কিন বাণিজ্য ও রণতরী মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় গিয়ে হাজির হয়। প্রথমে তারা শুরু করে আফিম ব্যবসা যা প্রাচ্যের জাতিসংঘের কাছে গর্হিত অপরাধ হিসাবে চিহিৃত। প্রথমে এই ব্যবসায় বৃটিশরা মনোনিবেশ করে। পরে মার্কিনীরা এতে ভাগ বসায়। এই ব্যবসায় শতকরা ৫শ ভাগের বেশি লাভ হত। এই লাভজনক ব্যবসাকে নিরাপদ করার লক্ষে মার্কিনীরা উঠেপড়ে লাগে। আজকের আমেরিকার ওয়াইন সংষ্কৃতি তাদের আদি মাদক ব্যবসার সাক্ষ্য বহন করে। মার্কিন বণিকরা ইজমির ও অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে আফিম ক্রয় করে ভূমধ্য সাগরে পাড়ি দিয়ে আটলান্টিক সাগর হয়ে উত্তমাশা অন্তরীপ ঘূরে ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে চীনের ক্যান্টনে নিয়ে যেত। এ জন্য তাদেরকে মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও আধুনিক লিবিয়ার জলসীমা ব্যবহার করতে হত।
বাণিজ্য তরীগুলো এসব দেশের বন্দর থেকে খাদ্য ও পানীয় সংগ্রহ করত। সেজন্য এসব দেশকে মার্কিন বণিকদের বড় অংকের কর দিতে হত। যা মার্কিন সরকার ১৭৮৭ সালে মার্কিন বণিকদের নিরাপত্তা বিধান ও আনুষাঙ্গিক সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত একটি স্বাক্ষর করতে মরক্কোকে বাধ্য করে। একই ধরণের চুক্তি স্বাক্ষর করতে ১৭৯৬ সালে লিবিয়াকে এবং ১৭৯৭ সালে তিউনিসিয়াকে বাধ্য করে। দস্যুবৃত্তির সফল বাস্তাবায়ন! এভাবে তাদের মাদক ব্যবসার পাশাপাশি দস্যুবৃত্তি আস্তে আস্তে আন্তজাতিক রুপ লাভ করে। আর মাদক ব্যবসার সাথে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরীহ নাগরিক অপহরণ করে দাসের ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠল।
নিষ্ঠুর দাস বাণিজ্য
শুরুতে আমরা তাদের প্রধান কাজ মাদক আর দাস বাণিজ্যের কথা উল্লেখ করেছি।তাদের মাদক বাণিজ্যের আর দস্যুবৃত্তির আলোচনার পর এবার তাদের নিষ্ঠুর দাস ব্যবসা সম্পর্কে আসুন একটু জেনে নিই।আবু রায়হান পূর্বযুগ থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। উপরে আমরা রেড ইন্ডিয়ানদের কিভাবে দাস বানিয়ে তাদের ওপর নিষ্ঠুরতা চালানো হতো তা সংক্ষেপে উল্লেখ করেছি। আবু রায়হান পূর্ব যুগের অনেক ইতিহাস অজানা হলেও ষোড়শ শতকের আরো আগে থেকেই মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাস বাণিজ্যের সন্ধান যাওয়া যায়।বস্তুত সে সময় যুদ্ধবন্ধী এবং ঋণ পরিশোধে অপারগ ব্যক্তিদের দাসকর্মে বাধ্য করা হত। দাসদের শুধু কঠোর কাজে বাধ্য করা হতো না, তাদের নিশঠুর দাস বৃত্তিতেও বাধ্য করা হতো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাস ব্যবসার এতোই নির্মম ও ব্যাপক পর্যায়ে পৌছে গিয়েছিল যে, ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত ১১টি সাউদান ষ্টেটস ও নর্দান ফেডারেল স্টেটস এর মধ্যে রীতি মতো গৃহযুদ্ধ সংগঠিত হয়। পরে ১৮৬৩ সালে তৎকালিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন দাস প্রথা বিলুপ্ত ঘোষনা করেন।দাস প্রথা বিলুপ্ত হলেও এখন শ্রম দাস প্রথার অভিশাপ দাস প্রথা থেকেও মারাত্মক হয়ে দেখা দিয়েছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক বছর পরই মার্কিন বাণিজ্য ও রণতরী মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় গিয়ে হাজির হয়, তখন মাদক ব্যবসার পাশাপাশি নিষ্ঠুর এ দাস বাণিজ্যে নেমে পড়ে মার্কিন শ্বেতাঙ্গরা।
১৬১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান দাস-দাসী আমদানীর গোড়াপত্তন হয়। সে বছর বিশজন মতান্তরে ত্রিশজন আফ্রিকান নাগরিককে অপহরন করে একটি ডাচ জাহাজে করে আমেরিকার ভার্জিনিয়া প্রদেশে নিযপ্রদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই আমেরিকার সর্বত্র দাসপ্রথার ব্যাপক প্রসার ঘটতে শুরু করে। ঔপনিবেশকদের পাশাপশি স্থানীয় স্বচ্ছল নাগরিকদের মাঝেও দাস গ্রহনের প্রবনতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কৃষি, শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে অদক্ষতার কারনে আমেরিকার তৎকালীন পর্তুগীজ এবং বৃটিশ ঔপনিবেশকদের একেবারেই সুবিধা হচ্ছিল না। উপরন্তু বৃটেন এবং পর্তুগাল থেকে যে সকল গরীব কৃষক এবং শ্রমিকদের কৃষি এবং অন্যান্য কাজ সম্পাদন করানোর উদ্দেশ্য আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হত তাদের চেয়ে আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গরা ছিল অধিকতর কর্মঠ এবং দক্ষ।
ফলে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আফ্রিকার সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল থেকে তারা কৃষ্ণাঙ্গদের অপহরন শুরু করে এবং তাদেরকে আমেরিকায় বিভিন্ন জায়গায় ধরে নিয়ে দাসকর্মে বাধ্য করে।অপহরণকৃত দাসদের মধ্যে শুধু নিরীহ গরীব মানুষজনই ছিলো না, ছিল বিভিন্ন সাম্রাজ্যের রাজপুত্র ও রাজকন্যাও। ইতিহাসবিদদের মতে আফ্রিকা থেকে ধৃত আমেরিকায় পাচারকারী দাস-দাসীদের শতকরা দশ থেকে ত্রিশ ভাগ ছিল মুসলমান এবং মুসলমান দাসীদের সংখ্যা ছিল শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ। এমনও দেখা গেছে পুরো একটি জনগোষ্টিতে ছিল একজন মাত্র মুসলমান যাকে আফ্রিকা থেকে ধরে এনে দাসকর্মে বাধ্য করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান দাস-দাসীদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুন। নিজেদের ইচ্ছামত ধর্ম কর্ম পালন করা ছিল অনেকটাই অসম্ভব, তার উপর অনেক মুসলমান দাস-দাসীদের জোরপূর্বক খৃষ্টধর্ম গ্রহনেও বাধ্য করা হত।
আজকের আগ্রাসনের শিকার অঞ্চলসমূহে নিরীহ মানুষদের খৃস্ট ধম গ্রহনের প্রলোভন তাদের সেই পুরনো মানসিকতারই বহিৃপ্রকাশ। প্রথমদিকে আমেরিকায় আগত আফ্রিকান মুসলমান দাস-দাসীদের অধিকাংশের নামই অজানা থেকে যায়। ক্রীতদাসদের সম্পত্তির তালিকায় কারো কারো নাম পাওয়া গেলেও তাদের আগমনের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন তথ্য জানা সম্ভব হয় নি। মুসলমান দাস-দাসীদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক লোকই স্কুলে যাওয়ার, সম্পত্তির মালিক হওয়ার, বিয়ে করার, আদালতের দ্বারস্ত হওয়ার অথবা তাদের মৃত্যু আইনগতভাবে নথিভুক্ত করার সুযোগ পেতেন। এদের উপর নির্যাতনের নানামুখী মাত্রা ছিল অসহনীয়, এদের নাম পযন্ত পরিবতন খৃস্ট নাম রাখতে বাধ্য করা হতো যা পরবর্তীতে বিভিন্ন লেখকের সত্যসন্ধানী রচনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান দাস-দাসীদের জীবনচরিত অধ্যয়ন করে নির্দ্বিধায় বলা যায়, মুসলমানেরা সেখানে তিনশ বছর ধরে চরম নিপীড়নের স্বীকার হয়েছিলেন। তথাপি ইসলামী রীতি নীতি পালনে তারা ভীষন অকৃপনতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন। ইসলামের প্রতি ভালবাসা এবং আল্লাহর প্রতি তাদের সীমাহীন আস্থা এখনও প্রতিটি বিবেকসম্পন্ন মুসলমানকে শিহরিত করে। নানা প্রতিকুলতার মধ্যে থেকেও তারা যেভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের জন্য কাজ করেছেন তা দৃষ্টান্তস্বরুপ। শত বঞ্চনা, নির্যাতন, নিপীড়নের মাঝেও অনেকেই ছিলেন প্রতিবাদী। তাদের শক্ত এবং পরিচ্ছন্ন প্রতিবাদের ফলেই বহু বছর দাসকর্ম করেও অনেকে এ যন্ত্রনা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম সম্প্রসারনের ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমান দাস-দাসীদের ভূমিকা স্বীকারযোগ্য। তাদের মাধ্যমেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের বীজ বপন হয়েছিল যার শস্যদানা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান মুসলমানের সংখ্যা পার করেছে আড়াই মিলিয়ন।
উঠতি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ
রেড ইন্ডিয়ানদের গণহত্যার মাধ্যমে নিমূল, মাদক ও নিষ্ঠুর দাস বাণিজ্যের মাধ্যমে অথনৈতিক সমৃদ্ধি অজনের পর এবার রাজ্য বিস্তারের উগ্র বাসনায় নেমে পড়ে সাম্রাজ্যবাদ হয়ে ওঠা মাকিনীরা। আজকের মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চেহারা ও চরিত্র বোঝার জন্যই ভূমি-প্রশ্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে হাজির হয়। প্রখ্যাত কলামিস্ট আফজর হোসেন তার ‘মাকিন সাম্রাজ্যবাদের সাম্প্রতিক ব্যাকরণ’ প্রবন্ধে তাদের সেই রাজ্য বিস্তারের উগ্র বাসনার কথা এভাবেই উল্লেখ করেন, ‘ভূমিতেই সাম্রাজ্যবাদ সবচাইতে দৃশ্যমান ও নগ্ন হয়’-কথাটা একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো।
ভূমি যে সাম্রাজ্যবাদের জন্য-বিশেষ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের জন্য-ঐতিহাসিকভাবে কতটা জরুরী হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে ক্যাস্ত্রোর একটি চমৎকার আলোচনা আছে তার সামপ্রতিক গ্রন্থ ওয়ার, রেইসিজম্ এ্যান্ড একোনমিক ইনজাস্টিস-এ। সেখানে ক্যাস্ত্রো আমাদের জানাচ্ছেন যে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ইতিহাস এবং তার ভূমিদখলের ও ভূমিদস্যুতার ইতিহাস কেবল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর কালেই সীমাবদ্ধ নয়। ক্যাস্ত্রোর মতে সেই ইতিহাসের জন্য আমাদেরকে যেতে হবে ঊনিশ শতকেই। তিনি তিনটি গরুত্বপূর্ণ সনের ওপর জোর দেন।
এগুলো হচ্ছে ১৮২৩, ১৮৪৮ এবং ১৮৯৮। হ্যাঁ, ১৮২৩ সালে সরবে ঘোষিত হয় ‘মনরো ডকট্রিন।’ তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতির নামাঙ্কিত এই মতবাদ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ভূমিদস্যুতার একটি মতাদর্শিক ভিত্তি তৈরি করার তাগিদেই প্রচার করে যে, ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই লাতিন আমেরিকাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হেফাজতে রাখা জরুরী। রাষ্ট্রপতি মনরো নিজেই একটি রূপক চালু করেন : ‘লাতিন আমেরিকা হচ্ছে আমাদের বাড়ীর পশ্চাদ্ভাগের উঠোন।’ কিন্তু মতবাদ ও রূপকের চেয়ে আরো সত্য ও বাস্তব হয়ে থাকে ইতিহাসে মূর্ত-হয়ে-ওঠা ঘটনা।
১৮৪৮ সালে মেঙিকোর অর্ধেকেরও বেশি ভূমি ছিনিয়ে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভৌগোলিক সীমানা সমপ্রসারিত করে। এভাবে নিজের দেশেই পরবাসী হয়ে ওঠেন অসংখ্য মেঙিকান। এরপর ১৮৯৮ সালে উঠতি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ভূমিদখলের ও ভূমিদস্যুতার চেহারা আরো নগ্ন হয় : কিউবা, পুর্তো-রিকো, গুয়াম, হাওয়াই এবং ফিলিপাইনস্ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি উপনিবেশে রূপান্তরিত হয়। মার্কিন সামরিক ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ব্লামের গবেষণা-মোতাবেক ভূমিদখলের জন্য বিংশ শতাব্দীতে কেবল লাতিন আমেরিকাতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় শতাধিক ছোটো-বড়ো ও প্রত্য-পরো সামরিক যুদ্ধ পরিচালিত হয়।
একমাত্র পরাশক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ
উঠতি মাকিন সাম্রাজ্যবাদ সামরিক আগ্রাসনের এবং দেশে দেশে দস্যুবৃত্তি চালিয়ে লুন্ঠনের মাধ্যমে তার রাজ্য বিস্তাররের উগ্র বাসনা সফল বাস্তবায়নের ফলে ১৮৭০-এর দশকেই মার্কিন অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির শিরোপা পায়।স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধ ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সামরিক শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা দান করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পরমানু শক্তির অধিকারীর দাপট প্রমানের জন্য জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমা হামলা চালায়।
সে হামলায় কয়েক লক্ষ নিরীহ মানুষ নিহত হয়, এবং ধ্বংসের স্তুপে পরিণত হয় ওই অঞ্চল। আর এর মাধ্যমে মানবতা ধ্বংসকারী প্রথম পরমানু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকা আত্মপ্রকাশ করে এবং রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে। ঠান্ডা যুদ্ধের শেষভাগে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন যুদ্ধ পরিচালনা ও গোয়েন্দাবৃত্তির মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নকে তাড়িয়ে দিয়ে তার পতন নিশ্চিত করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একমাত্র মহাশক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের দুই-পঞ্চমাংশ খরচ করে এই দেশ। এভাবেই মাকিন যুক্তরাষ্ট্র তার সকল শক্তি ও সম্ভবনাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের প্রজনন,দস্যুবৃত্তি, সামরিক আগ্রাসন, লুন্ঠনতন্ত্র, মানবতা ধ্বংস, মানবাধিকার লংঘন এবং জুলুমবাজীর মাধ্যমে আজকের পৃথিবীর একমাত্র সুপার পাওয়ার খ্যাত বিশ্ব শান্তির হুমকি, সভ্য দুনিয়ার দুশমন মা-কি-ন সা-ম্রা-জ্য-বা-দ এ পরিণত হয়।
Blog
History
USA
অয়ামেরিকা
ইতিহাস
এমেরিকা
কালাক্ষর
জাতী সত্বা
বাংলাদেশ
মার্কিন যুক্তরাস্ট
সমর কথন
সম্পাদকীয়
সম্রাজ্যবাদি
সামরিক
সাম্রাজ্যবাদ্
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment