ইউরোপ কে বদলে দেওয়া যুগান্তকারী ঘটনা সমূহ


ইউরোপ। আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ হলেও বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ১১ ভাগ নিয়ে তৃতীয় জনবহুল মানুষের মহাদেশ হিসাবে পরিচিত হয়ে আসছে । ৫০টি দেশ নিয়ে গঠিত ইউরোপ মহাদেশের রয়েছে এক সুপ্রাচীন ইতিহাস। কালের পরিক্রমায় ইউরোপ মহাদেশের মানুষের দ্বারা রচিত ইতিহাসের নানা বাক,সেই বাঁকে হয়েছে নানান পরিবর্তন, আর সেই পরিবর্তনের ইতিহাস এত দীর্ঘ, এত সংঘাত ময় যা অন্য কোন মহাদেশে খুব একটা দেখা যায় না।






সুদীর্ঘকাল প্রাচীন কাল থেকেই ইউরোপ রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাবের বীজ বয়ে নিয়ে চলছে। এই মহাদেশের এমন অনেক দেশ আছে যেগুলোর শক্তি পৃথিবীর প্রতিটা প্রান্ত অবধি প্রসারিত। আধুনিক জ্ঞ্যান বিজ্ঞানের চারন ভুমি হিসাবে কিংবা সভ্য সমাজের মানুষের বাসস্থান হিসাবে এক মাত্র ইউরোপ কেই গন্য করা হয়। ইউরোপের মাটিতে এক দিকে জন্ম নিয়েছে যেমন দার্ষনিক, অন্য দিকে ইউরোপের মাটি থেকে থেকে জন্ম নিয়েছে হাজার হাজার বিজ্ঞানীর, তেমনি ভাবে ইউরোপের কোন শান্ত প্রান্ত থেকে জন্ম নিয়েছে কোন কাল জয়ী কোন বীর যোদ্ধার। দার্ষনিকরা সমাজের মানুষের সামাজিক জীবন করেছে শ্রীংক্ষলাব্দধ, অন্য দিকে বিজ্ঞানীরা তাদের নিত্য নতুন আবিস্কারে মাধ্যমে মানুষের জীবন ধারন সহজ করে গেছেন।






আবার এই মহাদেশে জন্ম নেওয়া আকুতভয় বীর জাতীর লোক জন যুদ্ধ করে সম্রাজ্য গড়েছে, স্ম্রাজ্য ভেংছে এক দিকে মানবতার জাগরন অন্য দিকে মানবতা ধ্বংসের যুদ্ধ, এক দিকে অসুধ আবিস্কারের ফলে মানুষের জীবনী শক্তি বারোনো অন্য দিকে যুদ্ধের মাধ্যমে সেই মানুষের মৃত্যু আর সব মিলিয়ে এত বিচিত্র মহাদেশ পৃথিবীর অন্য কোন মহাদেশে দেখা যায় না, সৃজনশীল বাংলা ব্লগ কালাক্ষরে আজ আজ আমরা ইউরোপের ইতিহাস বদলে দেওয়া ১০ টি ঘটনা, যা ইউরোপের ইতিহাস বদলে দিয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করবো। এই ঘটনাগুলো শুধুমাত্র ইউরোপই নয় বরং সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।





০১. রেনেসাঁ





রেনেসাঁ শুধুমাত্র ইউরোপই নয় বরং বিশ্ব ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ নবজাগরনের কেন্দ বিন্দু ছিল । রেনেসাঁ নামক এই নবজাগরণের মাধ্যমেই সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিকসহ সমগ্র ক্ষেত্রেই পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না । মূলত চিরায়ত সাহিত্য ও শিল্প সম্পর্কিত বিষয়গুলোর প্রাচীনত্বটাকে ফের পুনরায় নতুন করে আবিষ্কারের পথ সুগম করার জন্য রেনেসাঁর অবদান কে স্বীকার করা হয়।





১৪৫৩ সালে তুর্কি বাহিনীর দ্বারা কন্সট্যান্টিপোলের পতন হয়,কন্সট্যান্টিপোলের অভিজাত শ্রেনীর লোক জন তাদের পিতৃ ভুমি ইতালীতে চলে যায়, ফলে ইতালির অভিজাত সমাজের সাথে কন্সট্যান্টিপোলের অভিজাত সমাজের মানুষের চিন্তা চেতানার সংমিশ্রণ ঘটে, জ্ঞ্যান বিজ্ঞান নতুনত্ব আর প্রচুর কর্ম চাঞ্চল্যে ভড়া এই ইতালিয়ানদের সুবাদেই নতুন এক ইতালির জন্ম হয়। কেননা, সেই সময়টাতে মানুষের চিন্তাধারাতে যে সূক্ষ্ম এক পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছিল। সেই পরিবর্তন ইতালির রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে শুরু করে সামাজিক,শিক্ষা, শিল্প রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক,সাহিত্যসহ সর্বক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করে। আর এই পরিবর্তন কেই পণ্ডিতেরা নবযুগ বা নবজাগরণ অথবা রেনেসাঁ নামে অভিহিত করে থাকেন।





এই পরিবর্তনের হাওয়া পঞ্চদশ শতকে শুরু হলেও, পরবর্তীতে উনিশ শতক অর্থাৎ প্রায় চারশ বছর ধরে এর প্রভাব বিরাজমান ছিল। মধ্যযুগে ইউরোপের শ্রেণীবিভাগ আর রাজনৈতিক কাঠামো ভাঙ্গার মধ্য দিয়েই মূলত রেনেসাঁর সূত্রপাত। শুরুটা ইতালিতে হলেও খুব শীঘ্রই এটা পুরো ইউরোপকে ঘিরে এক নতুনত্বের জাগরন শুরু হয়। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, মাইকেলএঞ্জেলো এবং রাফায়েল,এরা হচ্ছেন রেনেসাঁ যুগের শুরুর দিককার সফল শিল্পীগণ। চিন্তাভাবনা, বিজ্ঞান এবং শিল্প-সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্ব অনুসন্ধানে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটিয়েছিল এই রেনেসাঁ। রেনেসাঁ হচ্ছে সাংস্কৃতিক এক পুনর্জন্ম যা সমস্ত ইউরোপ বাসীকে ছুঁয়ে দিয়েছিল।






মূলত শিল্পের মাধ্যমেই রেনেসাঁর ছোঁয়া লেগেছিল ইতালি ছাড়িয়ে সমগ্র ইউরোপ এবং এমনকি পুরো বিশ্বে। প্রাচীনযুগে শিল্প ছিল ধর্ম এবং ঈশ্বর কেন্দ্রিক। মধ্যযুগেও এই রেশটা রয়ে গিয়েছিল শিল্পের ক্ষেত্রে। তাই, শিল্পের বিষয়বস্তু ছিল যীশুখৃষ্ট, গীর্জা এবং কিশোরী ম্যারি বা মাতা ম্যারি। রেনেসাঁর সময়কালে শিল্পীরা ধর্মীয় আর স্বর্গীয় প্রভাব হতে মুক্ত হয়ে, নিজেদের চিন্তাশক্তির উর্বরতা প্রকাশে তটস্থ হয়ে উঠে। রেনেসাঁর অগ্নিপুরুষ, যিনি একাধারে শিল্পী, বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী – লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির শারীরতত্ত্ব প্রকাশ পেলে নতুন এক ধারার সূত্রপাত হয় যেন।






এই শারীরতত্ত্ব শুধুমাত্র বিজ্ঞান নয় এমনকি শিল্প-সাহিত্যসহ সকল ক্ষেত্রেই অবশ্যই পাঠ্য বলে বিবেচিত হয়। দেব চরিত্রগুলো ধীরে ধীরে মানব অভিব্যক্তিতে পূর্ণতা পেতে থাকে। এবং শিল্প পায় নতুন এক দিক নির্দেশনা। ভিঞ্চির দ্য লাস্ট সাপার, রাফায়েলের দ্য ম্যাডোনা কিংবা মাইকেল এঞ্জেলোর দ্য ডেভিড তারই প্রমাণ। শিল্পের এই ধারার পরপরই সাহিত্যে মানবতাবাদের জয়গান শুরু হয়। নতুন মূল্যবোধে সাহিত্য রচিত হতে থাকে।





০২. উপনিবেশবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদ





কলোনিয়াজম বা উপনিবেশবাদ হচ্ছে এমন এক ব্যবস্থা যার মাধ্যমে এক ধনী বা ক্ষমতাবান দেশ দুর্বল কোনো দেশের উপর তার আধিপত্য বিস্তার করে। ইউরোপীয়রা পৃথিবীর স্থলভাগের বেশীরভাগ জায়গাতেই নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন এবং সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে শাসনও করেছিল। উপনিবেশের মাধ্যমে একটি জাতি অন্য জাতির উপর চাপ সৃষ্টি করে, এ র জনগণকে শাসন ও শোষণ করে এবং নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতিগত মূল্যবোধকে সেই জাতির লোকেদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। এতে করে শোষিত জাতির মূল্যবোধ সরে গিয়ে উপনিবেশ স্থাপন করা জাতির মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা পায়।






প্রাচীনকালের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, প্রাচীন গ্রীস, প্রাচীন রোম, প্রাচীন মিশর এবং ফিনিশীয়দের মধ্যে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চর্চা প্রচলিত ছিল। এই সভ্যতাগুলো নিজেদের পার্শ্ববর্তী এবং এমনকি অ-সংলগ্ন অঞ্চলেও নিজেদের সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছিল। নিজেদের শক্তি বিস্তারের লক্ষ্যে এবং পৃথিবী শাসন করার প্রত্যয়ে ১৫৫০ খ্রিষ্টাব্দ অবধি এমনটাই চলেছে। আবিষ্কারের যুগ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক উপনিবেশবাদের সূচনা হয়।






১৫০০ শতকের শুরু থেকেই পর্তুগাল নতুন বাণিজ্য পথের সন্ধান এবং নতুন সভ্যতার সন্ধানে ইউরোপের বাইরে পৃথিবীব্যাপী ভ্রমণে বের হয়। তবে এর আগেই পর্তুগীজরা ১৪১৫ সালে উত্তর আমেরিকার উপকূলীয় শহর সিয়েটা আবিষ্কার করে এবং ১৯৯৯ সাল অবধি সেখানে একতরফা রাজত্ব করেছে। শুরুতে পর্তুগীজদের পাশাপাশি স্প্যানিশরাও সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পথে এগোলেও পরবর্তীতে নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানী এবং ইংল্যান্ডও একই পথে হাঁটে। ১৭ আর ১৮শ শতাব্দীতে উপনিবেশবাদ প্রথা ভাঙ্গা শুরু হলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে আবারো তা প্রতিষ্ঠা পায়।






ইম্পেরিয়ালিজম বা সাম্রাজ্যবাদ হচ্ছে সেই ব্যবস্থা যার মাধ্যমে অন্য এক জাতির উপর জোরপূর্বক নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এতে করে গণহত্যা থেকে শুরু করে একনায়কতন্ত্রসহ সকল ধরণের সহিংসতার আশ্রয় নেয়া হয়। উপনিবেশবাদে যেমন নিজেরাই সেখানে বসতি স্থাপনের চিন্তা করে সাম্রাজ্যবাদে কিন্তু তেমনটা নয়। এখানে বসতি স্থাপনের চাইতে চিরস্থায়ীভাবে সেই জাতিকে পঙ্গু করে নিজেদের করায়ত্ত করে রাখাই মূল বক্তব্য। সাম্রাজ্যবাদের কথা প্রাচীন সভ্যতাগুলোতেও বর্ণিত আছে। তবে আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা আধুনিক উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার কাছাকাছিই বলা চলে। আমেরিকা কর্তৃক হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জকে করায়ত্ত করা ছিল এর অন্যতম বড় প্রমান।





০৩. সংস্কার





রিফরমেশন বা খ্রিষ্টধর্ম সংস্কার আন্দোলন; অথবা প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল ষোড়শ শতাব্দীতে। পশ্চিমা বিশ্বের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিভাজনমূলক এক আন্দোলনকেই মূলত রিফরমেশন বা সংস্কার আন্দোলন নামে অভিহিত করা হয়। একাধিক পোপ আর তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, রোমান ক্যাথলিক গীর্জার একচেটিয়া প্রভাব আর দুর্নীতি; এগুলোর সঙ্গে রেনেসাঁর মাধ্যমে লব্ধ নতুন জ্ঞান এবং প্রাচীন চিন্তাধারাকে বর্জন; সঙ্গে জাতীয়তাবাদ এবং মানবতাবাদের উত্থান – এসবকিছুই মূলত এই সংস্কার আন্দোলনের চালিকাশক্তি বলে গণ্য করা হয়।





১৫১৭ সালে জার্মানিতে এই সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। আর এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটনা জার্মান ধর্মযাজক মার্টিন লুথার। তার রচিত গ্রন্থ নাইনটি ফাইভ থিসিস প্রকাশ পাওয়ার মধ্য দিয়েই মূলত সংস্কারের বিষয়গুলো জনসম্মুখে উন্মোচিত হয়। মার্টিন লুথারের পূর্বেও অনেকেই এই আন্দোলন সঞ্চার অর্থাৎ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
তবে বেশীরভাগ ইতিহাসবিদ আর পণ্ডিতই মনে করেন যে, লুথারের এই এক গ্রন্থই সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেছিল। ক্যাথলিক চার্চের ধর্মীয় অসংগতিতে বিরক্ত এবং চার্চের প্রচারে অসন্তুষ্ট জনপদের কাছে তার আবেদনমূলক এই বিবৃতিগুলো দ্রুতই ইউরোপে ছড়িয়ে যায় সংস্কারবাদের ছোঁয়ায়। প্রোটেস্ট্যান্ট আধ্যাত্মিক এবং রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল। আধুনিক সরকারি আর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গঠনে সহায়তাও করেছিল।





০৪. আলোকিত যুগ





দ্য এনলাইটমেন্ট বা দ্য এজ অফ এনলাইটমেন্ট অথবা আলোকায়নের যুগ কিংবা আলোকিত যুগ হচ্ছে ইউরোপের এক বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলন। এই আন্দোলনের সময়কাল ছিল ১৭শ এবং ১৮শ শতকের পুরোটা সময় জুড়েই। ব্যক্তিস্বাধীনতা, স্বকীয়তা, মানব স্বাধীনতা, মানব ঐতিহ্য এবং যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠা ছিল এই আন্দোলনের উপজীব্য বিষয়। অন্ধ বিশ্বাস আর কুসংস্কারকে যুক্তি মূল্যে বিচার করার প্রতি জোর দেয়া হয়েছিল।





এই আন্দোলনটি বেশ অনেক বছর ধরে শিক্ষিত লেখক এবং যুগোপযোগী চিন্তাবিদদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তারাই মূলত এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। টমাস হবস, জন লক এবং ভলতেয়ারের মতো মানুষদের দর্শন সমাজ, সরকার এবং শিক্ষা সম্পর্কে নতুন চিন্তাভাবনার দিকে পরিচালিত করেছিল। যা পুরো বিশ্বকে নতুন চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিয় করিয়ে দিয়েছিল। নতুন ধারার এমন চিন্তাভাবনা আর দর্শনের জন্য অনেক চিন্তাবিদ এবং দার্শনিককেই অকথ্য নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল। তবুও তাদের প্রভাব ছিল সত্যিকার অর্থে অনস্বীকার্য।





০৫. ফরাসি বিপ্লব





১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে যে বিপ্লব শুরু হয়েছিল যা পুরো ইউরোপকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত আর সংস্কার করেছিল তাই মূলত ফ্রেঞ্চ রেভ্যুলেশন বা ফরাসি বিপ্লব। এই বিপ্লব এতটাই প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল যে, ফরাসি বিপ্লবকে অনেকাংশেই আধুনিক যুগের সূচনা বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। বিপ্লবের শুরুটা হয়েছিল একটা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে। এবং পরবর্তীতে এটা রাজতন্ত্র কর্তৃক জনগণের উপর অতিরিক্ত কর আদায় এবং রাজতন্ত্রের চাপিয়ে দেয়া বোঝারও উপরও আঙ্গুল তুলে প্রত্যক্ষভাবে। প্রাথমিক বিদ্রোহটার শুরু বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যা পুরো ফ্রান্স জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। আর তা সরকারের প্রতিটি ঐতিহ্য আর প্রথাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল।






ফরাসি বিপ্লব একদিকে যেমন জনগণকে সচেতন আর সোচ্চার হওয়ার শিক্ষায় শিক্ষিত করেছিল তেমনি এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে একনায়কতন্ত্রের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে রাজ্য দখল করার এক মহানায়কেরও উত্থান ঘটেছিল। ১৮০২ সালে নেপোলিয়ন বেনোপোর্টের উত্থান হয় এই ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে। শুধু ফ্রান্সকেই নয় বরং পুরো ইউরোপকে এই মহানায়ক যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছিল এবং এই মহাদেশ ও পৃথিবীর ইতিহাস আবার নতুন করে রচনা করতে বাধ্য করেছিল।





০৬. শিল্প বিপ্লব





১৮শ শতকের মধ্যভাগের বৈজ্ঞানিক আর প্রযুক্তিগত পরিবর্তনগুলো বিশ্বে এক আমূল পরিবর্তন বয়ে নিয়ে এসেছিল। আর তারই সুবাদে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুল্যশন বা শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল। শুরুটা হয়েছিল ১৭৬০ এর দশকে এবং ১৮৪০ এর দশক অবধি এই শিল্প বিপ্লব বহমান ছিল। এই সময়ে, যান্ত্রিকীকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং কারখানাগুলি অর্থনীতি এবং সমাজের প্রকৃতির পরিবর্তন করে। উপরন্তু, নগরায়ন এবং শিল্পায়ন দুটি বিষয়ই মানসিক আর শারীরিক উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক পরিবর্তন আনে।






এই সময়কালে কয়লা এবং লোহা শিল্পকারখানায় গ্রহণ করা হয় এবং উৎপাদন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হয়। বাষ্প শক্তির প্রবর্তন, পরিবহণ এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশ্বে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটায়। এরই মাধ্যমে জনসংখ্যার পরিবর্তনসহ এমন সব পরিবর্তন ঘটে যায় যা বিশ্ব এর আগে কখনো প্রত্যক্ষ করেনি।





০৭. রুশ বিপ্লব






১৯১৭ সালে রাশিয়াতে পরপর দুইটা বিপ্লব ঘটে। প্রথমটা গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায় আর দ্বিতীয়টা জার শাসকদের উৎখাতে নেতৃত্ব দেয়। প্রথমটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির কাছাকাছি সময়ে এবং দ্বিতীয় বিপ্লবটা একটা কমিউনিস্ট বা সাম্যবাদী সরকার গঠন করে তবেই থেমেছিল। প্রথম বিপ্লবটা ফেব্রুয়ারি মাসে হয়েছিল এবং পরেরটা অক্টোবর মাসে। তাই এদেরকে আলাদাভাবে ফেব্রুয়ারি এবং অক্টোবর বিপ্লব বলা হলেও সম্মিলিতভাবে রুশ বিপ্লব বলা হয়ে থাকে।





প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সামরিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটেই মূলত ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সূচনা। দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় চলিত রাশিয়ায় বারংবার বিদ্রোহ ঘটতে থাকে। একই বছরের অক্টোবরে ভ্লাদিমির লেনিন এবং তার বলশেভিয়াক দল রাশিয়াকে দখল করে। রাজধানী মস্কোতে স্থানান্তর করে এবং বলশেভিক দল সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে এটা এত বড় বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয় যে তা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসকে বদলে দিতে বাধ্য করেছিল।





০৮. নাৎসী বাহিনী এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ






প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পাশাপাশি সাম্রাজ্যিক জার্মানি ভেঙ্গে পড়ে সবদিক থেকে। এরপর জার্মানি বেশ দাঙ্গাপূর্ণ আর কোলাহলপূর্ণ এক সময় পার করে। যা নাৎসি বাহিনীর উত্থান এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘটায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উইমার রিপাবলিক জার্মানির হাল ধরে এবং সরকার ব্যবস্থা গঠন করে নতুন করে। এই অনন্য সরকারি কাঠামো ১৫ বছর স্থায়ী হয়েছিল। এরপর নাৎসি পার্টির উত্থান হলে এই কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে পুনরায়।






অ্যাডলফ হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানি নতুন রূপে মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়ায় বিশ্বের মানচিত্রের বুকে। জার্মানির হিটলার, ইতালির মুসোলিনি এবং জাপান মিলে এক সামরিক জোট গঠন করে এবং বিশ্বযুদ্ধের ডাক দেয়। এরই ফলশ্রুতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন মিত্রশক্তি হয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। হিটলার এবং তার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ বিশ্ব প্রত্যক্ষ করে। যুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয় ঘটে এবং মিত্রশক্তি বিজয়ী হয়। আর জার্মান রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং এমনকি কূটনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।





তথ্যসূত্রসমূহ:





  1. 8 Major Events in European History.

Comments