- Get link
- X
- Other Apps
- Get link
- X
- Other Apps
সোলায়মান জুয়েলঃ – আচ্ছা আপনি যখন দিনের বেলায় আকাশের দিকে তাকান তখন আপনার চোখে কি ধরা পরে? বা আপনি তখন কি দেখেন? উত্তর টি আমি ই বলে দিচ্ছি – আপনার চোখে তখন সূর্যের যে আলো বা কিরণ ধরা পড়ে- তা আসলে বাতাসে ভেসে থাকা আলোর কনিকা যাকে আরো সহজ ভাষায় বললে বায়ুমণ্ডলে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বস্তুকণিকা গুলো থেকে ঠিকরে পড়া বিক্ষিপ্ত আলো।
দিনের আকাশের রঙ কেন নীলে ভরপুর?
ফেইম্যান নামক এক পদার্থ বিজ্ঞানী আকাশের রঙ কেন নীল তার রহস্যের মূল বিষয় অনুধাবন করেছিলেন । তিনি তখন বিশ্ববিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির ছাত্র জীবন পার করছেন । তখন ই তিনি আকাশের রঙ কেন নীল দেখায় তার রহস্যভেদ করেন- এহেনো কর্মের দরুন তিনি ১৯৬৫ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন।
ফেইম্যান প্রমান করেন যে, দিনের বেলায় আমরা যখন আকাশের দিকে তাকাই তখন আমাদের চোখে সূর্যের যে সকল আলো বা সুর্যের কিরণ ধরা পড়ে তা আসলে অসীম আকাশের বাতাসে ভাসতে থাকা কিংবা বায়ুমণ্ডলে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বস্তুকণিকা থেকে ঠিকরে পড়া বিক্ষিপ্ত আলো ছাড়া আর কিছু নয়। আর যে হুতু নীল রঙের আলো লাল রঙের আলো থেকে অনেক বেশি সহজে ছড়িয়ে পড়ে — সে হুতু আকাশের আলোর প্রায় সবটাই ঠিকরে ছড়িয়ে পড়া আলো হয়ে উৎপন্ন হয় বলে আমাদের খালি চোখে আকাশকে নীল বলে মনে হয়। এটাকে আমরা এক ধরনের বিভ্রান্ত মূলক দেখাও বললে কোন ভুল হবে না। বিষয় টাকে একটা দড়িকে সাপ দেখার মতোর সাথে তুলনা করা যেতে পারে! কেননা, বায়ুমণ্ডলে বিরাজনমান ভাসমান বস্তুকণা সমুহ,এবং ইলেকট্রন প্রোটন, অনু -পরমাণুগুলো একে অন্যে ধাক্কাধাক্কি করার কারণে যে আলোক কিরণ বিক্ষিপ্ত হয়, সেই আলো কেই আমরা দেখি- আর যে হুতু নীল রঙের আলো বেশি বিক্ষিপ্ত হয়- তাই আমাদের চোখে আকাশের রঙ নীল বলেই প্রতিয়ন মান হয়- যদি বাতাস না থাকতো – তবে বাইয়ুমন্ডেলে অবস্থিত বস্তুকনা গুলো স্থির থাকতো- আর স্থির থাকলে তাদের ভিতর ধাক্কা ধাক্কি হত না- ফলে আলোক কনিকা গুলো বিচ্ছুরিত ও হত না- তখন দিনের বেলার আকাশ - রাতের আকাশের মতোই কালো দেখতে হত; একটি কথা বলা দরকার যে, চাঁদে কোনো বাতাস নেই যা সূর্যের আলোকে ছড়িয়ে দিতে পারে। আর তাই চাঁদের কোন নিজেস্য আলো নেই। জ্যোত্স্নার আলো হল ধার করা আলো। যা দিয়ে রাতের আকাশ হয়ত কিছুটা উজ্জলতা আনে কিন্তু সেই টা আকাশে চাঁদ উঠেলেই কেবল প্রতিয়ন মান হয়- বাকি সময় রাতের আকাশ কে নিকশ কালো ই দেখায় ।
অবশ্য সূর্য যখন পশ্চিম দিগন্তে অস্ত যায়, তখন আকাশ আবীর রঙে রাঙা হয়ে ওঠে এর কারন আলো তখন বিক্ষিপ্ত হয় না বলেই আমরা গোধূলি বেলায় প্রধানত সুন্দর রাঙা সূর্যটার দিকেই দৃষ্টি দেই। বিক্ষিপ্ত আলোর দিকে তখন আমাদের তেমন এক টা নজর থাকে না। সূয্যিমামা যখন পাটে বসে সে তখন থাকে ঠিক দিগন্ত রেখার ওপরে। আর তাই সূর্যের আলোর কিরণকে আমাদের চোখে পৌঁছুতে হলে দিগন্ত থেকে মোটামুটি আনুভূমিক রেখায় সোজা আসতে হয়। আর তাই আলো সেক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি বাতাস ভেদ করে আসতে হয়। ঐ সময় আমরা আগে যে কারণ বলেছি সেই কারনে অন্যসব রং বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় কিন্তু লাল রংটা থাকে অবিক্ষিপ্ত অবস্থায়- যার ফলে ঐ রংটাই আমরা দেখি।
এখন আমরা বিষয়টা বুঝতে বিজ্ঞানী ফেইম্যানের কথায় আসি। বায়ুমণ্ডলে অসংখ্য বস্তুকণিকা ভাসে যেগুলোর কথা মোটামুটি আমরা আগেই বলেছি তা থেকেই নানা রংয়ে আলো বিক্ষিপ্ত হয়। ফেইম্যান এই বস্তুকণিকাগুলো যখন ধাক্কাধাক্কি করে তখন কি হয় তা নির্ণয়ের পরীক্ষায় আত্মনিয়োগ করেন। পদার্থ বিজ্ঞানীদের ভাষায় সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বস্তুকণিকার এই ধাক্কাধাক্কিকে ইংরেজিতে এস-ম্যাট্রিক্স নামে পরিচিত। এস বলতে তারা স্ক্যাটারিং বা বিক্ষিপ্তায়নকে বুঝিয়ে থাকেন। এই এস ম্যাট্রিক্স আসলে কিছু সংখ্যার সমষ্টি যার মাঝে তথ্য থাকে বস্তুকণিকা গুলোতে ধাক্কাধাক্কি লাগলে কি ঘটে। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি সহকারে একটি নির্দিষ্ট দিক বা কোণে কত সংখ্যক বস্তুকণিকা ছড়িয়ে পড়বে তার হিসেবও এতে পাওয়া যায়। তাই ঊনিশ শতকের বিজ্ঞানীরা একটা মোটামুটি ধরনের এস-ম্যাট্রিক্স কাজে লাগিয়ে প্রথম ধরতে পেরেছিলেন আকাশ কেন নীল আর গোধূলি কেন লাল। সকালের প্রথম সূর্যও তাই কি কারণে লাল তা বোধ হয় তোমাদের আর বলতে হবে না। আর এও বোধ হয় বলতে হবে না যে নীলাকাশ আমাদের এতো ভালো লাগে—এতো চিঠি লিখতে ইচ্ছা হয় আকাশের ঠিকানায় প্রকৃত অর্থে নীলও নেই, আকাশও নেই। তুমি যদ্দুর বিমানে বা রকেটে ওঠো ঠিক ওপরে ঝুলবে বটে নীল সামিয়ানা কিন্তু কখনো ধরা দেবে না অন্ত মেঘের মতো করেও। আকাশ আসলে শূন্য, মহাশূন্য।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment